![]() |
জর্জ স্যান্ডার্স এর প্রথম উপন্যাস ‘লিংকন ইন দ্য বার্ডো’ লিখে তিনি ম্যান বুকার জিতেছেন। |
প্রশ্নঃ
আব্রাহাম লিংকনের
ওপর
অনেক বই লেখা হয়েছে , আরও
একটা
কেন?
জর্জ
স্যান্ডার্স:
সত্যি বলতে, আমি লিংকনকে
নিয়ে লিখতে চাইনি, কিন্তু
প্রায় বিশ বছর আগে মাঝরাতে সদ্যমৃত ছেলের সমাধিতে লিংকনের
প্রবেশের গল্পটি যখন শুনি,
ভীষণভাবে তাড়িত হইয়েছিলাম তখন। মূলত
লিংকন ইন দ্য বার্ডো
উপন্যাসের ভেতর দিয়ে আমি
আগের সেই বিমোহিত অনুভূতির
ভেতর প্রবেশ করতে চেয়েছি। এরপর
লিংকনকে নিয়ে লিখতে যাওয়াটা
প্রয়োজন হয়ে উঠেছে, চাপ
মুক্তির জন্য। নিজেকে
এই বলে শুরু করি
যে আমি লিংকনকে নিয়ে
বড়সড় করে বিশদভাবে কোনো
বই লিখছি না, আমি
কেবল তাঁর কিছু খণ্ড
মুহূর্ত—ওই রাতের ওই
বিশেষ মুহূর্তটি তুলে ধরতে যা
দরকার, তাই
লিখছি। এটা
হয়ে উঠেছে ফেব্রুয়ারির হুল ফুটানো ঠান্ডা রাতে সন্তানহারা এক পিতার মনোজগতের কড়চা।
প্রশ্নঃ সর্ম্পূণ উপন্যাসটি লেখা হয়েছে ব্লক কোটেশনে, কেন?
জর্জ স্যান্ডার্স: আমার এক গুণী ছাত্র, অ্যাডাম লেভিন একবার আমাকে ই-মেইলে বলল, সে ভাবছে, আমি যদি কখনো উপন্যাস লেখতাম, সেটা হয়তো টানা লেখা হতো। তার কথায় আমার অভিব্যক্তি ছিল এমন: ওহ্, মজার তো! এবং একই সঙ্গে আমি চেষ্টা করছিলাম বিরক্তিকর বিষয়গুলো এড়িয়ে চলার। যেমন, আমার ইচ্ছা ছিল না ৩০০ পৃষ্ঠার লিংকন মনোলগ লেখার। এবং সরল-সোজা বর্ণনামূলক শৈলী, যেমন: 'এক ঘন অন্ধকার রাতে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন সকলের অলক্ষ্যে অন্ধকারের চাদরে মোড়ানো সমাধিস্থলে প্রবেশ করল।' এ ধরনের সূচনাকে মনে হলো বিরক্তিকর।
অনেক লেখা আছে যা ভেতরে-ভেতরে বিরক্তিসূচক
বিষয় থেকে আপনাকে সরিয়ে নেবে। এ ধরনের লেখার ভালো কৌশল হলো রঙ্গ-তামাশার দিকে ঝুঁকে
পড়া। আর এ উপন্যাসের ক্ষেত্র আমি ‘আহা’ অনুভূতি পেলাম এই ভেবে যে আমি যদি ভূতের
সঙ্গে সমান্তরালভাবে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে দাঁড় করাতে পারি তাহলে ঘটা করে কোনো তামাশা
সৃষ্টি না করেও এ দুটোর মধ্য দিয়ে গল্পটা বলে যেতে পারব আমি।
প্রশ্নঃ
বিজ্ঞান কল্পকাহিনি ও উদ্ভট ঘটনাকে বাস্তববাদী গল্প বা উপন্যাসে ব্যবহার করার জন্য
‘স্লিপস্ট্রিম’ (কল্পকাহিনি, রোমান্স কাহিনি এবং বাস্তবাদিতার
মিশ্র শৈলী) লেখক বলা হয় আপনাকে। বাস্তবতা কি এ ধরনের পাগলাটে বাস্তববাদের ভেতর দিয়ে
নির্ণয় করা যায়?
জর্জ
স্যান্ডার্স:
আমি
এ ধরনের ঘটনা বা উপকরণ ব্যবহার করি একটি বাস্তব ঘটনার ভাবোদ্দীপক সত্যের ভেতর মধু সঞ্চার
করতে। যখন আমি নিজের জীবনের দিকে ফিরে তাকিয়ে দেখি আমার জীবনটা আসলে কেমন ছিল—যেটা আক্ষরিকভাবে
ঘটেছে, সেটা তুলে ধরতে আমি যে আবেগঘন মুহূর্তের ভেতর দিয়ে গেছি, সেটাকে কমিয়ে আনতে
হয়েছে। অন্যভাবে বলতে হয়, জীবনের সোজাসুজি বাস্তবধর্মী বয়নরীতি অনেক কিছু কঠিন করে
তোলে, এমনকি আমার মতো তুলনামূলক মধ্যবিত্ত জীবনকেও। নিজেকে আমি আসলে গোগলীয় বলে মনে
করি, চেষ্টা করি জীবন কেমন অনুভূত হয় সেটা বুঝতে; তবে সেটা অনুভব করতে হলে আমাদের কিছুটা
দুরন্তভাবে দোলাতে হবে। কারণ, জীবন প্রকৃতিগতভাবেই যেমন সুন্দর তেমন অপ্রকৃতিস্থ।
টাইম, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- সারা বেগেলে
0 comments: